তাসকিন আহমেদের দুর্দান্ত বোলিং এবং তামিম ইকবাল ও লিটন দাসের অসাধারণ ব্যাটিং জুটিতে স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচে ৯ উইকেটের দাপুটে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। এ জয়ের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ওয়ানডে সিরিজ জিতল টাইগাররা। এর আগে প্রোটিয়াদের ঘরের মাটিতে টাইগারদের কোনো জয় ছিল না।
আজ (বুধবার) সেঞ্চুরিয়নে টসে জিতে প্রথমে ব্যাটিং করতে নেমে তাসকিনের অসাধারণ বোলিংয়ে মাত্র ১৫৪ রানে অলআউট হয়ে যায় প্রোটিয়ারা। ১৫৫ রানের লক্ষ্য টপকাতে নেমে ১২৭ রানের অসাধারণ জুটি গড়েন তামিম-লিটন। শেষদিকে এসে লিটন দাস উইকেট হারালেও লড়াই চালিয়ে যান বাংলাদেশের দলপতি। তার ৮৭ রানের দুর্দান্ত ইনিংসে শেষ পর্যন্ত ১৪১ বল হাতে রেখেই জয়ের দেখা পায় টাইগাররা।
২১তম ওভারে এসে বাংলাদেশ প্রথম উইকেট হারায়। কেশভ মারাহাজের বলে ব্যক্তিগত ৪৮ রানের ফেরেন লিটন দাস। ৫৭ বলে ৮টি চারে ইনিংস সাজান লিটন। ওপেনিংয়ে তামিম-লিটন ১২৫ বলে ১২৭ রানের জুটি গড়েন। ব্যাট করতে নেমে ৫২ বলে ৯টি চারে হাফসেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তামিম ইকবাল। এটি তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৫২তম ফিফটি।
লিটনের বিদায়ের পর লড়তে থাকা তামিমকে সঙ্গ দেন সাকিব আল হাসান। এ দুই ব্যাটারের ৩৪ বলে ২৯ রানের জুটিতে ভর করে জয়ের বন্দর পৌঁছায় বাংলাদেশ। ৮২ বলে ১৪ চারে ৮৭ রান করে অপরাজিত থাকেন তামিম ইকবাল। অপরপ্রান্তে থাকা সাকিব ২ চারে ২০ বলে ১৮ রান নিয়ে অপরাজিত থাকেন।
এর আগে টস জিতে ব্যাটিং বেছে নেওয়া স্বাগতিকদের শুরুটা দেয়নি এমন কোন আভাসই। দুই ওপেনার কুইন্টন ডি কক আর ইয়ানেমান মালান শুরুটা এনেছিলেন ভালো। রান আসছিল সাবলীল গতিতে। গতি আরেকটু চড়া করতে গিয়ে প্রথম ভুল করেন ডি কক। লঙ অফ দেখেও মেহেদী হাসান মিরাজকে ওভার দ্য টপ খেলতে গিয়েছিলেন। ধরা দেন মাহমুদউল্লাহর হাতে।
৪৬ রানে তারা হারায় প্রথম উইকেট। কে জানত এরপর আর কেবল ১০৮ রান জড়ো করা হবে তাদের। তাসকিনের দারুণ বোলিংয়ের সঙ্গে স্বাগতিকদের ভুল পরিকল্পনা, অস্থির হয়ে তালগোল পাকানো ম্যাচে রেখেছে ভূমিকা।
তিনে নেমে কাইল ভেরেইনা থিতু হওয়ার দিকে ছিলেন। আরেক প্রান্তে একদম সাবলীল খেলতে থাকা মালানের সঙ্গে তার জুটি ছিল সম্ভাব্য ছবি। কিন্তু এই ব্যাটার ভুল করেন তাসকিনের বলে। তাসিকনকে পুল করে বাউন্ডারি মারার পর অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বল আয়েশি ঢঙে টেনে আনেন স্টাম্পে।
ক্যারিয়ারের সেরা সময় কাটানো তাসকিন খানিক পর বড় শিকার ধরেন। থিতু থাকা মালান তার বাড়তি বাউন্সের বল খেলতে পারেননি। লাফিয়ে ক্যাচ গ্লাভসে জমান মুশফিকুর রহিম।
ইনিংস মেরামত করতে পারেননি টেম্বা বাভুমা। সাকিবের আর্ম বল বুঝতে না পেরে সুইপ করতে গিয়ে ব্যাটে নিতে পারেননি। এলবিডব্লিউতে শেষ হয় তার। শরিফুলের আচমকা লাফানো বলে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন বিপদজনক রাসি ফন ডার ডাসেন।
৮৩ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে চরম বিপর্যয়ে পড়া প্রোটিয়াদের বাঁচাতে চেষ্টা চালিয়েছিলেন ডোয়াইন প্রিটোরিয়াস। ২৯ বলে তার ২০ রানের ইনিংস শেষ হয়েছে ওই তাসকিনের বলে। ডেভিড মিলার ছিলেন একমাত্র চিন্তার কারণ। তাসকিনের লেগ স্টাম্পের অনেক বাইরের বল তাড়া করে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন তিনি। দুই বল পর কাগিসো রাবাদাকেও উইকেটের পেছনে ক্যাচ বানিয়ে ৫ শিকার ধরেন তাসকিন। কেশব মহারাজ পরে কিছু রান করে দলকে দেড়শো ছাড়িয়ে নেন। তাতে কেবল ম্যাচের আয়ুই বেড়েছে।
তাসকিন আহমেদ এ ম্যাচে ৯ ওভার বল করে ৩৫ রান দিয়ে পাঁচটি উইকেট নিয়েছেন। এর সুবাদে সিরিজ ও ম্যাচসেরার পুরস্কার তিনিই পেয়েছেন। বাংলাদেশের হয়ে সাকিব আল হাসান দুটি উইকেট নিয়েছেন।
ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে অধিনায়ক তামিম ইকবাল বলেছেন, ‘আমি গর্বিত, বিশেষ করে বাংলাদেশি ফাস্ট বোলার ম্যাচ ও সিরিজসেরা হওয়ায় আমি গর্বিত। দক্ষিণ আফ্রিকায় সিরিজ জেতা একটি বিশাল অর্জন। আমরা এখন বিশ্বাস করি, আমরা বিদেশের মাটিতেও সিরিজ জিততে পারি। এই জয় সামনে এগিয়ে যেতে আমাদের আত্মবিশ্বাস দিবে। গত ৫-৬ বছর ধরে আমরা ওয়ানডেতে ভালো খেলছিলাম। তবে বিদেশের মাটিতে সিরিজ জিততে পারছিলাম না। এবার সেটি করতে পেরেছি। ’
৩১ মার্চ থেকে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকা।#
পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/২৩
Leave a Reply