বাংলাদেশে পানিবাহিত রোগ ডায়রিয়া আক্রান্তের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাচ্ছে। রাজধানীর আন্তর্জাতিক উদারাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) বা কলেরা হাসপাতালে একদিনে সর্বোচ্চসংখ্যক ১ হাজার ৩৩৪ জন রোগী ভর্তি হয়েছে ২৮ মার্চ। গত ষাট বছরের মধ্যে এটি ছিল রেকর্ড। ৩০ মার্চ বুধবার ২৪ ঘণ্টায় আইসিডিডিআর,বি’র হাসপাতালে ভর্তি হয় ১৩১৭ জন ডায়রিয়া রোগী।
গত সপ্তাহের শুরুতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত বুলেটিনে বলা হয়েছে, বিশেষ করে রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকায় ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। তবে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়ার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।
রাজধানী ও উপকণ্ঠ এলাকায় ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়ার কারণে রোগীর চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন আইসিডিডিআর,বি’র চিকিৎসকরা। হাসপাতালে স্থান সংকুলান না হওয়ায় বাইরে বড় দুটি তাঁবু স্থাপন করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
এই বিশেষায়িত হাসপাতালে প্রতিদিনই সহস্রাধিক রোগী ভর্তি হচ্ছে। মার্চ মাসের ৩০ দিনে ২৮ হাজার ৩৫০ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছে আইসিডিডিআর,বিতে। এর আগের মাসে (ফেব্রুয়ারি) ভর্তি হয়েছিল ১০ হাজার ৩৪৪ জন। আর গত জানুয়ারি মাসে ভর্তি হয় ১৫ হাজার ৯০১ জন। আক্রান্তদের বড় অংশ প্রাপ্তবয়স্ক হলেও শিশুদের সংখ্যাও কম নয়।
চিকিৎসকগণ জানিয়েছেন, গরমের কারণে এবং অনিরাপদ পানি পান করার কারণে ডায়েরিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে।
এ বিষয়ে আইসিডিডিআরবির সহকারি বিজ্ঞানী ডা. ফারজানা আফরোজ বলেন, শিশুকে খাওয়ানোর ফিডার ঠিকমত পরিষ্কার না করা হলে শিশুর ডায়েরিয়ার সম্ভাবনাটা বেশি থাকে। মায়েদের উচিত শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো এবং বাচ্চার ডায়রিয়া শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্যালাইন খাওয়ানো।
বাংলাদেশে প্রতি বছরই গরমকালে ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দেয়। এই বছর মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই ডায়রিয়া দেখা দিয়েছে এবং মার্চের মাঝামাঝি থেকে বেশ ব্যাপকহারে তা বাড়তে শুরু করেছে।
সরকারের রোগ তত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট আইইডিসিআর’র প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এস এম আলমগীর জানান, এ বছর মার্চেই ৩৪/৩৫ ডিগ্রি তাপমাত্রা উঠতে দেখা যায়। এ ধরনের তাপমাত্রায় খাবারে দ্রুত জীবাণু জন্ম নেয়। গরমে রাস্তার পাশের খাবার, লেবুর শরবত- এসব প্রাপ্ত বয়স্কদের ডায়রিয়ার জীবাণুগুলোর অন্যতম উৎস।
ডা. আলমগির বলছেন, “সাধারণভাবেই প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে যে ডায়রিয়া হয় তার মধ্যে প্রধান কারণ কলেরা এবং ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়া। এগুলো ছড়ানোর মাধ্যমই হচ্ছে এসব জীবাণু দ্বারা দূষিত পানি ও পচা বাসি খাবার।”
ডা. আলমগির বলছেন, শিশুদের মধ্যে শীতকালে রোটা ভাইরাসের কারণে ডায়রিয়া হয়ে থাকে। এই মৌসুমেও শিশুদের রোটা ভাইরাসের কারণে ডায়রিয়া হচ্ছে। এছাড়া শিগেলা ব্যাকটেরিয়াও একটি কারণ।
তিনি বলেন, ‘ই-কোলাই থেকে যে ডায়রিয়া হয় তাতে বমি হবে, পেট কামড়াবে, তার পর পাতলা মল হবে। রোটা থেকে ডায়রিয়া হলে মলের রঙ সবুজাভ হবে। শিগেলার হলে অল্প করে নরম মল হবে- তবে তাতে মিউকাস ও পরে রক্ত থাকতে পারে। গা-গোলানো ভাব থাকতে পারে।’
তার মতে, ‘এই দুটি ক্ষেত্রে বাড়িতে স্যালাইন খেয়ে চিকিৎসা চালানো যেতে পারে। খুব খারাপ হলে তাহলে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে।’
তিনি বলছেন, সব ধরনের ডায়রিয়ার চিকিৎসা একটাই আর সেটি হল শরীর থেকে বের হয় যাওয়া পানি ও লবণ আগের জায়গায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া।
ডায়রিয়া হলে রোগীকে স্বাভাবিক খাবার দিতে হবে। স্যালাইনের পাশাপাশি সাধারণ পানি, ডাবের পানি ও অন্যান্য তরল পানীয় দিতে হবে।#
পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/১
Leave a Reply